Wednesday, May 8, 2024
spot_img
Homeবাণিজ্যঅস্থির হয়ে উঠেছে খেজুরের বাজার, ‘মজুতে’ কৃত্রিম সংকট

অস্থির হয়ে উঠেছে খেজুরের বাজার, ‘মজুতে’ কৃত্রিম সংকট

বিনোদন বাজার রিপোর্ট

কয়েকদিন পরই শুরু হবে মাহে রমজান। এই রমজান মাসকে কেন্দ্র করে দেশে প্রতি বছরই নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়ে। বিশেষ করে রোজার ইফতার সামগ্রীর দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যায়।

প্রতিবারের মতো এবারও যেন এর ব্যত্যয় নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে গত বছরের চেয়ে এবার আরও বেশি দামে কেনাবেচা হচ্ছে।

পবিত্র রমজান মাসকে সামনে রেখে অন্য ভোগ্যপণ্যের পাশাপাশি অস্থির হয়ে উঠেছে খেজুরের বাজার। সারাদেশে হু হু করে বাড়ছে এ পণ্যটির দাম। এক বছরের ব্যবধানে ১০০ শতাংশের বেশি বেড়ে দ্বিগুণের চেয়েও বেশি হয়েছে রমজানের অন্যতম অনুষঙ্গ খেজুরের দাম। বর্তমান পরিস্থিতির কারণে খেজুরের চাহিদার পাশাপাশি যোগানও (আমদানি) কমেছে বলে দাবি ব্যবসায়ীদের। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অতিরিক্ত শুল্ক, ডলার সংকট, এলসি জটিলতার কারণেই খেজুরের দাম বাড়ছে।

অন্যদিকে আড়তদার ও কমিশন এজেন্ট ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, আমদানিকারকরাই খেজুরের বাজার অস্থির করে রেখেছেন। বন্দর থেকে নতুন খালাস নেওয়া খেজুর বাজারে না এনে কোল্ড স্টোরেজে মজুত করে রাখা হচ্ছে।

আমদানি শুল্ক কমানো, বাজার তদারকিসহ সরকারের নানান উদ্যোগের পরও কমছে না খেজুরের দাম। গত বছরের তুলনায় বর্তমানে দেশের বাজারে খেজুরের দাম মানভেদে বেড়েছে ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ। আমদানি শুল্ক ১০ শতাংশ কমালেও বাজারে তার প্রভাব পড়ছে না। এখনো দফায় দফায় বাড়ছে দাম।

শনিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাজধানীর বেশ কয়েকটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সৌদি আরবের মেডজুল, মাবরুম, আজওয়া ও মরিয়ম খেজুরের দাম গত এক মাসের ব্যবধানে কেজিতে বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা।

জাম্বো মেডজুল মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৮০০ টাকা। সাধারণ মেডজুল এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৪০০, মাবরুম খেজুর এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ৫০০, আজওয়া খেজুর মানভেদে ৯০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবচেয়ে ভালো মানের মরিয়ম খেজুর বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৯০০ থেকে এক হাজার ১০০ টাকায়। এছাড়া কালমি মরিয়ম ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা, সুফরি মরিয়ম ৭৫০ থেকে ৮০০, আম্বার ও সাফাভি ৯০০ থেকে এক হাজার ২০০ ও সুক্কারি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায়।

তবে পাড়া মহল্লার বাজার ও দোকানে এসব দামি খেজুর বিক্রি হচ্ছে আরও ৫০ থেকে ২০০ টাকা বেশি দরে। সাধারণ মানের খেজুরের মধ্যে খুচরায় বর্তমানে প্রতি কেজি গলা বা বাংলা খেজুর বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, জাহিদি খেজুর ৩০০ থেকে ৩২০ ও মানভেদে দাবাস খেজুর ৪৫০ থেকে ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া বরই খেজুর মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৪৪০ থেকে ৫৪০ টাকায়।

পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩ সালে রোজার আগে জাহেদি ব্র্যান্ডের খেজুরের দাম ছিল কার্টনপ্রতি (১০ কেজি) এক হাজার ২৫০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। চলতি বছরের দুই সপ্তাহ আগেও একই ব্র্যান্ডের খেজুরের দাম ছিল কার্টনপ্রতি এক হাজার ৮০০ টাকা।

এদিকে, গত ৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) এক আদেশে খেজুরের আমদানি শুল্ক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে আনার ঘোষণা দেয়। এর আগে খেজুর আমদানিতে মোট ৫৩ শতাংশ শুল্ক পরিশোধ করতে হতো। ১০ শতাংশ কমানোর পর এখন যা দাঁড়িয়েছে ৪৩ শতাংশে।

তবে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বর্তমানে খেজুরের শুল্কায়ন মূল্য প্রতি টন এক হাজার থেকে ২ হাজার ৭৫০ ডলার। এর সঙ্গে কাস্টমস ডিউটি ১৫ শতাংশ, রেগুলেটরি ডিউটি ৩ শতাংশ ও ভ্যাট ১৫ শতাংশ। পাশাপাশি অগ্রিম আয়কর ও অগ্রিম কর ৫ শতাংশ হারে দিতে হচ্ছে। এতে বর্তমানে সর্বমোট ৪৩ শতাংশ শুল্ক দিতে হচ্ছে। এর ফলে শুল্ক ১০ শতাংশ কমানোর পরও খুচরা বাজারে দামে খুব একটা প্রভাব ফেলছে না।

যে সকল কারণে খেজুরের দাম বেড়েছে:

• অতিরিক্ত শুল্ক, ডলার সংকট, এলসি জটিলতায় দাম বাড়ছে
• বাজারে না ছেড়ে কোল্ড স্টোরেজে মজুতের অভিযোগ
• শুল্ক কমানো হলেও দামে প্রভাব পড়ছে না
• লোকসানের শঙ্কায় এবার খেজুর আমদানি কম

সবমিলিয়ে এ বছর খেজুরের বাজার অনেক বেশি অস্থিতিশীল।’

- Advertisment -spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়