বিনোদন বাজার রিপোর্ট
মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) সকালে জাতীয় সংসদ ভবনে গিয়ে দেখা গেছে, সংসদের প্রতিটি গেটে সেনা সদস্যরা পাহারায় রয়েছেন। সেই সঙ্গে প্রতিটি গেটেই উৎসুক জনতার চাপ লক্ষ্য করা গেছে। কেউ সংসদ ভবনের ভেতরে প্রবেশ করছেন, আবার কেউ সংসদের ভেতরে ঘুরে আসছেন। ভেতরে গিয়ে কেউ ছবি তুলছেন আবার কেউ ভিডিও করছেন। এ সময় গতকাল জাতীয় সংসদ ভবনে উৎসুক জনতার প্রতিটি জায়গায় ক্ষতবিক্ষতের ছাপ দেখা গেছে।
সংসদ ভবন নির্মাণের পর জানালায় যেসব গ্লাস লাগানো হয়, সেগুলোও ভেঙে ফেলা হয়েছে বলে জানান সংসদের কর্মচারীরা।
শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়ার পর জাতীয় সংসদ, গণভবনসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট হয়েছে। জাতীয় সংসদ ভবনের পাশাপাশি গণভবন হওয়ায় এই দুই স্থাপনা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
গুলশান থেকে জাতীয় সংসদ ভবন দেখতে আসেন একজন। তিনি বলেন, এসে ভালো লেগেছে । সবচেয়ে ভালো লাগছে, জালিম সরকার পদত্যাগ করেছে । সংসদে ঢুকতে কেউ বাধা দেয়নি। রাস্তায় কোনো ট্রাফিক নেই। রাস্তায় শুধু জনগণ।
ডেমরা থেকে সংসদ ভবন দেখতে আসেন একজন। তিনি বলেন, সম্মান এবং অপমানের দায় আল্লাহর কুদরতি হাতে। দুই-তিনদিন আগেই এই সংসদের পাশে সাধারণ জনগণ আসতে পারতো না। অথচ এখন সাধারণ জনগণ এটার ভেতরে ঘুরছে। আল্লাহ জাস্ট শিক্ষা দিয়েছে। কোনো জিনিস নিয়ে অহংকার করা উচিত না। সরকার পতনে আমি খুব খুশি।
অপরদিকে মঙ্গলবার সকালেও গণভবনের সামনে উৎসুক জনতার ভিড় দেখা যায়। সকাল ৯টায় সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে থাকা লোকদের বাইরে বেরিয়ে আসতে অনুরোধ করছেন সেনা সদস্যরা।
আর মূল গেইটের সামনে থাকা কেউ কেউ আবার সেনা সদস্যদের অনুরোধ করছেন- ভেতরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য। কিন্তু সেনা সদস্যরা নতুন করে আর কাউকেই ভেতরে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। গেইটে দাঁড়িয়েই ছবি তুলছেন কেউ কেউ।
উৎসুক জনতার ভিড় ছিল জাতীয় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণেও। গণভবনের পাশ দিয়ে সংসদ ভবনে প্রবেশের ভিআইপি সড়ক দিয়ে রিকশা, অটোরিকশা, মোটরসাইকেল নিয়েও অনেকে সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে প্রবেশ করছেন। কেউবা ছবিও তুলছেন।
সড়কের মুখে থাকা ভিআইপি সাইনবোর্ডের লেখাগুলো কালি দিয়ে মুছে ফেলা হয়েছে। এই সড়কটি মূলত রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী ও স্পিকারের সংসদে প্রবেশের পথ।
বেলা পৌনে ১০টায় সেখানে দেখা যায়, সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে প্রবেশ উন্মুক্ত থাকলেও মূল ভবন পাহারায় রয়েছেন সেনা সদস্যরা। তারা ভবনের ভেতরে কাউকে প্রবেশ করতে দিচ্ছেন না। তবে ভবনের বাইরের খোলা প্রাঙ্গণ ও লেকের পাশ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছেন লোকজন। কেউ কেউ লেকের পাশে বসে এবং ভবনের গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে ছবিও তুলছেন।
স্কুল পোশাক পরিহিত অনেককেও দেখা যায় সংসদ ভবন প্রাঙ্গণে ঘুরে বেড়াতে। সংসদ ভবনের উত্তর দিকের বিজয় সরণির পাশের লেকে কয়েকজনকে গোসল করতেও দেখা যায়।
একজন পথচারী বলেন, “গতকাল টিভিতে দেখছি গণভবনের ভেতরে মানুষ। কিন্তু মারামারি হয় কি না- এই ভয়ে আসি নাই। পরে মনে মনে আফসোস হইছে। এজন্যই আজকে সকাল সকাল আসছি।
“এসব জায়গায় তো অন্য সময় আসতে পারুম না। আজকে গণভবনের ভেতরেও গেছিলাম। সংসদ ভবনও দেখলাম। ভবনের ভেতরে যাইতে পারলাম না।”
সংসদ ভবন এলাকায় ঘুরে বেড়াতে পেরে উৎফুল্ল দেখা যায় অনেককে।
প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে সেনা সদস্যরা। সকাল ১০টায় সরেজমিনে দেখা যায়- মূল গেইটের সামনে কয়েকজন সেনা সদস্য পাহারা দিচ্ছেন। গেইটের ভেতরেও সেনাবাহিনীর গাড়ি রয়েছে। লোকজনকে ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।
কেউ কেউ সেনা সদস্যদের অনুরোধ করে গেইটে দাঁড়িয়েই ছবি তুলছেন। গেইট দিয়ে ভেতরে তাকিয়ে দেখা যায়, বাইরে সোফা-সেটসহ বিভিন্ন মালামাল খোলা জায়গায় পড়ে রয়েছে। তবে মূল গেইট তালাবদ্ধ।