বিনোদন বাজার ডেস্ক
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. মোখলেস উর রহমান জানিয়েছেন, মানুষ যাতে আরও জনবান্ধব পরিবেশে চলাচল করতে পারে ও নিরাপদ বোধ করে সেই কারনে আগামী দুই মাসের জন্য নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেয়া হয়েছে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের ।
বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে সিনিয়র সচিব এ কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘সরকার মনে করেছে বিস্তৃত পর্যায়ে মাঠের বিভিন্ন জায়গায় সেনাবাহিনী কাজ করছে। তারা মনে করেছে, এটা (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া) হলে পারপাস অব দ্য গভর্নমেন্ট সিকিউরড দ্য সিটিজেন। উই আর সারভিং ফর দ্য স্টেট (আমরা দেশের সেবা করছি)। এই মুহূর্তে মনে হয়েছে এটা দরকার। টার্গেট (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়ার সময়) বলে দেওয়া হয়েছে, মাত্র ৬০ দিন।’
প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা আছে, এক্ষেত্রে কোন দ্বন্দ্ব তৈরি করবে কিনা- এ বিষয়ে সিনিয়র সচিব বলেন, ‘এটা কোন ক্যাডারের ক্ষমতা না, এটা রাষ্ট্রের ক্ষমতা। কোন দ্বন্দ্ব হবে না। এক রাষ্ট্র এক জনগণ এক সরকার। জনস্বার্থে আপনি কাজ করেন, আমি কাজ করি। এটা (সেনাবাহিনীকে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতা দেওয়া) ভালো ফল দেবে।’
‘দ্য কোড অব ক্রিমিন্যাল প্রসিডিউর, ১৮৯৮’ এর ১২(১) ধারা অনুযায়ী দুই মাসের (৬০ দিন) জন্য এই ক্ষমতা দিয়ে মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। সেনাবাহিনীর কমিশনপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এ ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা সারাদেশে প্রয়োগ করতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
সেনাবাহিনীর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ‘ফৌজদারি কার্যবিধির, ১৮৯৮’ এর ৬৪, ৬৫, ৮৩, ৮৪, ৮৬, ৯৫(২), ১০০, ১০৫, ১০৭, ১০৯, ১১০, ১২৬, ১২৭, ১২৮, ১৩০, ১৩৩ ও ১৪২ ধারার অপরাধগুলো বিবেচনায় নিতে পারবেন বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে।
আইনের এসব ধারা অনুযায়ী একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের যেসব ক্ষমতা রয়েছে-
ধারা ৬৪ : ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে অপরাধ সংঘটনকারী ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করার বা গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেওয়ার এবং হেফাজতে রাখার ক্ষমতা।
ধারা ৬৫ : গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা বা তার উপস্থিতিতে গ্রেপ্তারের নির্দেশনা যার জন্য তিনি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে পারেন।
ধারা ৮৩/৮৪/৮৬ : ওয়ারেন্ট অনুমোদন করার ক্ষমতা বা ওয়ারেন্টের অধীনে গ্রেপ্তারকৃত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে অপসারণের আদেশ দেওয়ার ক্ষমতা।
ধারা ৯৫(২) : নথিপত্র ইত্যাদির জন্য ডাক ও টেলিগ্রাফ কর্তৃপক্ষের দ্বারা অনুসন্ধান এবং আটক করার ক্ষমতা।
ধারা ১০০ : ভুলভাবে বন্দি ব্যক্তিদের হাজির করার জন্য অনুসন্ধান-ওয়ারেন্ট জারি করার ক্ষমতা।
ধারা ১০৫ : সরাসরি তল্লাশি করার ক্ষমতা, তার (ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তি) উপস্থিতিতে যে কোনো স্থানে অনুসন্ধানের জন্য তিনি সার্চ ওয়ারেন্ট জারি করতে পারেন।
ধারা ১০৭ : শান্তি বজায় রাখার জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১০৯ : ভবঘুরে এবং সন্দেহভাজন ব্যক্তির ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তার প্রয়োজনীর ক্ষমতা।
ধারা ১১০ : ভালো আচরণের জন্য নিরাপত্তা প্রয়োজনীয় ক্ষমতা।
ধারা ১২৬ : জামিনের নিষ্পত্তি করার ক্ষমতা।
ধারা ১২৭ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার আদেশ দানের ক্ষমতা।
ধারা ১২৮ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য বেসামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।
ধারা ১৩০ : বেআইনি সমাবেশ ছত্রভঙ্গ করার জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করার ক্ষমতা।
ধারা ১৩৩ : স্থানীয় উপদ্রব নিয়ন্ত্রণে ক্ষেত্র বিশেষে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।
ধারা ১৪২ : জনসাধারণের উপদ্রবের ক্ষেত্রে অবিলম্বে ব্যবস্থা হিসেবে আদেশ জারি করার ক্ষমতা।
উল্লিখিত ক্ষমতা ছাড়াও, যে কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ এর অধীনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য সরকার এবং সেই সঙ্গে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দ্বারা সংশ্লিষ্ট এখতিয়ারের মধ্যে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।