বিনোদন বাজার রিপোর্ট
শরীর সুস্থ রাখতে যেসব খনিজ উপাদান প্রয়োজন তার মধ্যে ম্যাগনেসিয়াম অন্যতম । এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় । সেইসঙ্গে হৃৎপিণ্ড ভালো রাখতে সাহায্য করে ।
আমাদের শরীরের ক্যালসিয়াম, আয়রন, প্রোটিন এবং ভিটামিনের প্রয়োজন । কিন্তু আমাদের মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি রয়েছে তা হল ম্যাগনেসিয়াম ৷ চিকৎসকদের মতে, ম্যাগনেসিয়াম এমন একটি পুষ্টি উপাদান যা আমাদের শরীরের পেশী তৈরি করতে এবং স্নায়ুকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে ।
ম্যাগনেসিয়াম আপনার শরীরের অপরিহার্য খনিজগুলির মধ্যে একটি । এটি হার্টের স্বাস্থ্য ভালো রাখা থেকে শুরু করে হাড়ের শক্তি বাড়ানো-সহ অনেকগুলি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে । ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি খুবই সাধারণ বিষয়। আপনি ম্যাগনেসিয়াম-সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে দ্রুত এই ঘাটতি মেটাতে পারেন । উদ্ভিদ এবং প্রণীজ ভিত্তিক অনেক ধরনের খাবারই ম্যাগনেসিয়ামের চমৎকার উৎস ৷ তাই আপনার খাদ্যতালিকায় প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করা প্রয়োজন ।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে পেশীতে ক্র্যাম্প, ভেরিকোজ ভেইন, খিদে কমে যাওয়া, অস্টিওপোরোসিস, অনিদ্রা, হাঁপানি, মাথাব্যথা, দুর্বলতা ইত্যাদি অনেক সমস্যার সৃষ্টি হয় । শুধু তাই নয়, অনেক সময় এর ঘাটতির কারণে আমাদের মনও নিস্তেজ হয়ে পড়ে ।
ম্যাগনেসিয়ামের গুরুত্ব নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞানের অধ্যাপক নাজমা শাহীনের পরামর্শ রইলো:
বিপাকে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়ামঃ
শরীরের অসংখ্য এনজাইমের মধ্যে ৩০০টি এনজাইমের কো-ফ্যাক্টর হিসেবে ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে। ফলে এই উপাদান এনজাইমের ক্রিয়ায় সাহায্য করে। পুষ্টি উপাদান কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট এগুলোর বিপাকে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম।এ ছাড়া গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদিতে ভূমিকা রাখে। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে ম্যাগনেসিয়ামের বিকল্প নেই। এটি ন্যাচারাল ক্যালসিয়াম চ্যানেল ব্লকার হিসেবে কাজ করে রক্তের নালিগুলোকে স্বাভাবিক রাখে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। ম্যাগনেসিয়াম শরীরের জেনেটিক উপাদান যেমন ডিএনএ, আরএনএ তৈরি, সেলুলার ফাংশান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট তৈরিতে সাহায্য করে।
খাদ্য থেকে এটিপি তৈরি হয়ঃ
শরীরে শক্তি উৎপাদনের জন্য খাদ্য থেকে এটিপি তৈরি হয়। এটিপি তৈরি এবং শক্তি সংরক্ষণে ম্যাগনেসিয়ামের এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। শরীরের নতুন কোষ তৈরি, কোষের ক্ষয়পূরণ ইত্যাদি কাজে প্রোটিন প্রয়োজন। আর এই প্রোটিন সংশ্লেষণের কাজে ম্যাগনেসিয়াম সাহায্য করে। এমনকি ইনসুলিনের কার্যকারিতা সচল রাখতে ম্যাগনেসিয়াম কাজ করে। ইনসুলিনের কার্যক্রম সচল থাকলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এজন্য ডায়াবেটিক রোগীদের শরীরে পর্যাপ্ত ম্যাগনেসিয়াম থাকা জরুরি।
হৃদরোগ ও হাড়ের সংকট দূর করতে সাহায্য করেঃ
মাংসপেশির সংকোচন প্রসারণ, হার্টবিটের ছন্দ বজায় রেখে হার্টকে সুস্থ রাখা, এবং সকল স্নায়ুর কার্যসম্পাদনে সাহায্য করে ম্যাগনেসিয়াম। আমাদের শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম থাকে হাড়ের মধ্যে। এটি হাড়ের গঠন, হাড়ের ম্যাট্রিক্স সংশ্লেষণে কাজ করে।
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতির কিছু লক্ষণ
মাংসপেশিতে ব্যথা
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে মাসল ক্র্যাম্পস বা মাংসপেশিতে প্রদাহ,মাসল স্পাজম অর্থাৎ পেশি অনিচ্ছাকৃত এবং জোর করে সংকুচিত হয়ে পড়া এবং শিথিল হতে না পারা এমন সমস্যা দেখা যায়।
ক্লান্তি
ম্যাগনেসিয়ামের অভাব হলে সবসময় ক্লান্ত লাগতে পারে। যেমন শরীর অতিরিক্ত দুর্বল লাগা, শক্তি না পাওয়া, অবসাদগ্রস্ত থাকা।
মানসিক স্বাস্থ্য
মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ম্যাগনেসিয়াম উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে। ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে ডিপ্রেশন, উদ্বিগ্নতা দেখা দিতে পারে। যারা আগে থেকেই এ ধরনের সমস্যায় আক্রান্ত তাদের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
হাত-পায়ে ঝিম ধরা
অনেক সময় হঠাৎ করে কিছু সময় হাত-পায়ের কিছু অংশ অসাড় হয়ে যায়, অনুভূতি পাওয়া যায় না, নড়াচড়া করতে অসুবিধা হয়।
অনিদ্রা
ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতিতে সময়মতো ঘুম আসতে চায় না। ঘুমালেও নিরবচ্ছিন্ন ঘুম হয় না।
অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন
যেহেতু ম্যাগনেসিয়াম হৃৎস্পন্দন স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে, তাই ম্যাগনেসিয়ামের ঘাটতি হলে অস্বাভাবিক হৃদস্পন্দন দেখা দেয়।
জেনে নিন, কী কী খেতে পারেন –
সবুজ শাক সবজি: সবুজ শাকসবজি ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিনের ভালো উৎস । প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় সিদ্ধ করে বা স্যালাড হিসাবে শাক সবজি রাখতে পারেন । পালং শাকে সবচেয়ে বেশি ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়। এছাড়া বাঁধাকপিও ম্যাগনেসিয়ামের ভালো উৎস ।
কাজু বাদাম: প্রতিদিন এক মুঠো কাজুবাদাম এবং আমন্ড খাওয়া আপনার শরীরের ম্যাগনেসিয়ামের চাহিদা মেটাতে একটি ভালো বিকল্প হতে পারে । এটি ইমিউন সিস্টেমকেও শক্তিশালী করে । অতএব এটি অবশ্যই আপনার ডায়েটে রাখতে পারেন ।
বীজ জাতীয় খাবারঃ
ডাল, সয়াবিন, ছোলা থেকে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায়।
কলা: পটাশিয়াম সমৃদ্ধ কলা হার্টের স্বাস্থ্য এবং হাড় মজবুত করার জন্য খুব ভালো বিকল্প হিসাবে কাজ করে । এছাড়াও এতে উপস্থিত ভিটামিন সি এবং ম্যাগনেসিয়াম আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ঘাটতি পূরণে সহায়ক হতে পারে ।
বীজ জাতীয় খাবারঃ
মিষ্টিকুমড়ার বিচি, সূর্যমুখীর বিচি ইত্যাদিতে উচ্চমাত্রার ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
শস্যজাতীয় খাবারঃ
শস্যজাতীয় খাবার যেমন, লাল চাল, লাল আটা, লাল চিড়া, রোলড ওটস, বার্লি ইত্যাদিতে ভালো পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে।
সামুদ্রিক মাছ: ম্যাগসেয়িামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস সামুদ্রিক মাছ । যেমন- টুনা, সার্ডিন, ম্যাকেরেলে পর্যাপ্ত পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় । বিশেষজ্ঞদের মতে, সপ্তাহে একদিন এই মাছ খেলে ভালো ফল পাওয়া যায় ৷