বিনোদন বাজার রিপোর্ট
দেহের বাড়তি ওজন ঝরাতে প্রথমেই আসে খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের কথা।
এক্ষেত্রে কিছু খাবার যেমন এড়াতে হয়। তেমনি কয়েকটি খাবার একেবারেই বাদ দেওয়া উচিত হয় না।
আর এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘দি নিউট্রিশন টুইনস’য়ের দুই পুষ্টিবিদ ট্যামি লাকাটোস শামস ও লিজি লাকাটোস, “আঁশ, প্রোটিনসহ এরকম খাবার আছে যা কম খেয়েও পরিতৃপ্তি হওয়া যায়। আর এর ফলাফল হল কম ক্যালরি গ্রহণ।”
তাই পরিতৃপ্তি মাত্রা বজায় রাখতে ইটদিস নটদ্যাট ডটকম’য়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বেশ কয়েকটি খাবার খাওয়ার পরামর্শ দেন তারা।
ক্রিম ধরনের খাবার
ওজন ঝরানোর ক্ষেত্রে প্রথমেই ক্রিম দেওয়া খাবার, যেমন- আলু ভর্তা, ক্রিইমি পাস্তা এসব খাবার এড়াতে বলেন।
তবে এই পুষ্টিবিদ-দ্বয়ের মন্তব্য হল, যদি এসব খাবার একেবারে বাদ দেওয়া হয় তবে মনে এক ধরনের অতৃপ্তি থেকে যায়। ফলে কয়েকদিনের মাথায় ‘ডায়েট’ ভুলে এই ধরনের খাবার বেশি খাওয়া হয়ে যায়।
তাই এই ধরনের খাবার বাদ না দিয়ে বরং ক্রিমের সাথে মাখিয়ে বিকল্প খাবার হিসেবে খাওয়া যেতে পারে- ওটস বা ক্রিইমি সুপ বা ডাল, বীজ কিংবা মটরশুঁটির সাথে মিশিয়ে।
মিষ্টান্ন
শুনে অবাক লাগতে পারে মিষ্টান্ন বা ডেজার্ট খাওয়া কেনো এড়াতে বলা হচ্ছে। তবে বিষয়টা একই। এই ধরনের মিষ্টি খাবার এড়ালে পরে এসব খাবার ইচ্ছে বাড়তে থাকে।
এই দুই পুষ্টিবিদের মতে, “ধীরে ধীরে ওজন কমালে টেকসই হয় বেশিদিন। তাই স্বাস্থ্যকর মিষ্টান্ন খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। কিংবা পরিমাণে অল্প মিষ্টি খাওয়া যেতে পারে যাতে অতৃপ্তি কাজ না করে।”
পিনাট বাটার
চিনাবাদাম আর এর থেকে তৈরি বাটার- দুটোই ওজন ঝরাতে ভূমিকা রাখে। তবে পরিমাণে হতে হবে সংযোত। তাই ওটস, স্মুদি বা বাদামি রুটির সাথে অল্প চিনাবাদাম বা এক চা-চামচ পরিমাণ পিনাট-বাটার মাখিয়ে খাওয়া যেতেই পারে।
আলু ও শাকপাতা
পরিতৃপ্তি তালিকায় শীর্ষে অবস্থান করছে আলু। তবে অবশ্যই ফ্রেঞ্চ ফ্রাইস, ওয়েজেস বা চিপস হিসেবে নয়।
বরং রান্না বা সেদ্ধ করা আলু হল স্বাস্থ্যকর। দৈনিক তিন আউন্স আলু খাওয়ার পরামর্শ দেন এই পুষ্টিবিদেরা।
এসবে আঁশ থাকে। তাই বেশি ক্যালরি গ্রহণ ছাড়াই পেট ভরা রাখতে পারে। আর তিতা শাক যেগুলো আছে সেগুলো খেতে পারলে আরও ভালো। কারণ জিহ্বায় এই তিক্ত স্বাদ যাওয়া মাত্রই হজম প্রক্রিয়া দ্রুত হয়। পুষ্টি উপাদান ভালোভাবে শোষিত হয়। আর বিপাক প্রক্রিয়া দ্রুত করে। আর এসবই ওজন কমানোতে সহায়ক।
গ্রিন টি
ক্ষুধার মাত্রা কমাতে পারে এই চা। তাছাড়া বেশি ক্যালরি ও চর্বি পোড়াতেও সাহায্য করে। কারণ গ্রিন টি’র ক্যাফিনে রয়েছে চর্বি পোড়ানোর উপাদান।
মাছ
চর্বিযুক্ত মাছ প্রোটিনের ভালো উৎস, যা দেহের জন্য উপকারী। আর এই ধরনের মাছে থাকা ওমেগা-থ্রি ফ্যাট উপাদান পেটভরা অনুভূতি দেয়। ফলে ক্ষুধা লাগে কম।
ঝাল লাল মরিচ
এই লাল মরিচে থাকা ‘ক্যাপসাইসিন’ ওজন কমাতে ভূমিকা রাখে। ক্ষুধা কমাতে পারে। তাই ডিম, পাস্তা, ভাত বা সামুদ্রিক- সব ধরনের খাবারের সাথেই মরিচ খাওয়া পরামর্শ দেন ‘দি নিউট্রিশন টুইন্স’।
মটর ও বাঁধাকপি
লবণাক্ত বা মিষ্টি খাবারের প্রতি ঝোঁক কমাতে সাহায্য করে মটর। এছাড়াও পাওয়া যায় আঁশ ও প্রোটিন, যা কিনা উদর-তৃপ্তির অনুভূতি দেয় অনেকক্ষণ।
বিশেষ করে বেগুনি বা লাল বাঁধাকপি খাওয়া ওজন কমানোতে সহায়ক ভূমিকা রাখে। মাত্র ২৮ ক্যালরি থাকে এক কাপ বাঁধাকপিতে। ২ গ্রাম থাকে আঁশ।
আর ক্রুসিফেরাস সবজির অন্তর্ভুক্ত বলে, এই সবজি সালফার যুক্ত অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস ‘গ্লুকোসিনোলেটস’য়ের ভালো উৎস। এই উপাদান ওজন কমানোর যাত্রা প্রদাহ কমাতে ভূমিকা রাখে। আরও রয়েছে আঁশ ও ফাইটোস্টেরল্স। এই দুই গুরুত্বপূর্ণ উপাদান অন্ত্রে ভালো ব্যাক্টেরিয়ার বৃদ্ধির মাধ্যমে হজম শক্তি উন্নত করতে পারে। যা কিনা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
ওজন কমানোর জন্য নিম্নোক্ত আরও কিছু নিয়মাবলী মেনে চলা উচিৎঃ
* ওজন কমাতে হলে অতিরিক্ত লবণ খাওয়া পরিহার করতে হবে। কারণ লবণ শরীরের ওজন বাড়াতে সাহায্য করে।
* দুধযুক্ত খাবার যেমন— পনির, মাখন খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। এগুলো উচ্চ চর্বিযুক্ত। মাংস ও আমিষজাতীয় খাবারও নির্দিষ্ট পরিমাণে খেতে হবে।
* বাড়তি মেদ ঝেড়ে ফেলার অন্যতম উপাদান হচ্ছে— তাজা ফলমূল ও সবুজ শাকসবজি। তাই যাদের ওজন বেশি, তাদের বেশি করে এগুলো খাওয়া উচিত।
* উচ্চ শর্করাসমৃদ্ধ খাদ্য, যেমন— চাল, আলু নিয়ন্ত্রিত মাত্রায় খেতে হবে, গম (আটা) খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
* অতিরিক্ত স্বাদযুক্ত সবজি ও করলা ওজন কমানোর জন্য কার্যকর।
* মসলাজাতীয় খাবার, যেমন— আদা, দারুচিনি, কালো মরিচ এগুলো প্রতিদিনের খাবারে রাখতে হবে। মসলাজাতীয় খাবার হলো ওজন কমানোর কার্যকর ঘরোয়া পদ্ধতি।
* মধু দেহের অতিরিক্ত জমানো চর্বিকে রক্ত চলাচলে পাঠিয়ে শক্তি উৎপাদন করে, যা ব্যবহৃত হয় দেহের স্বাভাবিক কার্যকলাপে। মধু খাওয়া প্রথমে শুরু করতে পারেন অল্প পরিমাণে, যেমন— এক চামচ বা ১০০ গ্রাম, যা হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে এর সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস দিয়ে খেতে পারেন।
এ ধরনের চিকিৎসায় এক চামচ টাটকা মধুর সঙ্গে আধা চামচ কাঁচা লেবুর রস আধা গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে নির্দিষ্ট বিরতি দিয়ে প্রতিদিন কয়েকবার খেতে হবে।