মতামত ।। সফল আহাম্মেদ ।।
রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন শতাধিক মানুষ। তিনি নিজে থেকে পদত্যাগ না করলে হয়ত কয়েকদিন পর তাকে অপসারণ করার দাবি আসবে।
কিন্তু মজার ব্যাপার হল সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতির পদত্যাগ বা অপসারণ কোনোটাই এখন সম্ভব হবে না। আবার কোন একটি বিশেষ আইনে যদি করা সম্ভব হয়, তার ফল আবার এই মুহূর্তে দেশ বা সরকারের জন্য ভাল হবে না।
এর কারণ এই মুহূর্তে যদি রাষ্ট্রপতি পদত্যাগ করেন তাহলে দেশে একটা শূন্যতা তৈরি হবে।
কোন ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে? তার আগে জানা দরকার কেন পদত্যাগ বা অপসারণ সম্ভব না।
সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের এখতিয়ার একমাত্র সংসদের। কিন্তু বর্তমানে সংসদ না থাকায় রাষ্ট্রপতিকে অপসারণের সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা সংবিধানে নেই।
আবার তিনি পদত্যাগ করতে পারেন স্পিকারের কাছে। কিন্তু বর্তমান জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত এবং স্পিকার পদটি শূন্য। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেশ ছাড়ার পর অজ্ঞাত স্থান থেকে পদত্যাগ করেছেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। আবার ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু হত্যা মামলায় কারাগারে রয়েছেন।
সংবিধানের ৫০(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, কার্যভার গ্রহণের তারিখ থেকে পাঁচ বছর মেয়াদে রাষ্ট্রপতি তাঁর পদে অধিষ্ঠিত থাকবেন। শর্তাংশে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রপতির পদের মেয়াদ শেষ হওয়া সত্ত্বেও তাঁহার উত্তরাধিকারী কার্যভার গ্রহণ না করা পর্যন্ত তিনি স্বীয় পদে বহাল থাকিবেন। ৫০(৩) অনুচ্ছেদে স্পিকারের উদ্দেশে স্বাক্ষরযুক্ত পত্রযোগে রাষ্ট্রপতি তাঁর পদ ত্যাগ করতে পারবেন।
৫২(১) অনুচ্ছেদে বলা আছে, এই সংবিধান লঙ্ঘন বা গুরুতর অসদাচরণের অভিযোগে রাষ্ট্রপতিকে অভিশংসিত করা যাবে। তার জন্য সংসদের মোট সদস্যের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের স্বাক্ষরে অভিযোগের বিবরণ লিখিত একটি প্রস্তাবের নোটিশ স্পিকারের কাছে দিতে হবে। স্পিকারের কাছে নোটিশ দেওয়ার দিন থেকে ১৪ দিনের আগে বা ৩০ দিনের পর এই প্রস্তাব আলোচিত হতে পারবে না; এবং সংসদ অধিবেশনরত না থাকিলে স্পিকার অবিলম্বে সংসদ আহ্বান করবেন।
৫২(৪) অনুচ্ছেদে বলা আছে, অভিযোগ বিবেচনার পর মোট সদস্য সংখ্যার কমপক্ষে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটে অভিযোগ যথার্থ বলে ঘোষণা করে সংসদ কোনো প্রস্তাব গ্রহণ করলে প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার তারিখে রাষ্ট্রপতির পদ শূন্য হইবে।
রাষ্ট্রপতি না থাকলে কোন ধরনের শূন্যতা তৈরি হবে?
বর্তমান রাষ্ট্রপতি না থাকলে, নতুন করে রাষ্ট্রপতি নিয়োগের কোনো সুযোগ নাই। ফলে একটি সংকট তৈরি হবে।
উদাহরণস্বরূপ, এই সরকার অনেক আইনের সংশোধন করছে ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সংস্কার আনছেন। এখন যদি কোন অর্ডিন্যান্স করতে হয়, সেক্ষেত্রে রাষ্ট্রপতিকে লাগবে।
তাই এই মুহূর্তে সবার উচিত, আবেগের বশবর্তী হয়ে আন্দোলন না করে, ধৈর্য ধরা!
লেখক একজন সাংবাদিক ও কলাম লেখক