Friday, December 20, 2024
spot_img

বন্ধ হয়ে গেছে দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কার্যক্রম

বিনোদন বাজার রিপোর্ট

দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক ৫২৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সবকয়টি ইউনিটের উৎপাদন পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প নষ্ট হওয়ার কারণে তিন নম্বর ইউনিটের উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায় বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৩টি ইউনিটের মধ্যে প্রথম ও দ্বিতীয় ইউনিট বন্ধ থাকলেও সচল ছিল তৃতীয় ইউনিটটি। যা থেকে প্রতিদিন ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদিত হচ্ছিল। সেটিও সোমবার সন্ধ্যায় বন্ধ হয়ে গেছে।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক। এর আগে ১ মাস ৬ দিন বন্ধ থাকার পর গত শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৫টা ১৭ মিনিট থেকে উৎপাদন শুরু হয়েছিল ৩ নম্বর ইউনিটে।

বড়পুকুরিয়া খনি থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৫২৫ মেগাওয়াট বড়পুকুরিয়া কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান হারবিন ইন্টারন্যাশনাল।

পাঁচ বছরের চুক্তি অনুযায়ী আগামী বছর তাদের মেয়াদ শেষ হবে। চুক্তি মোতাবেক, এ সময় উৎপাদন সচল রাখতে ছোট ধরনের মেরামত ও যন্ত্রাংশ সরবরাহের কথা থাকলেও তার কিছুই করেনি চিনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। যার কারণেই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বার বার ত্রুটি দেখা দিলেও সঠিকভাবে মেরামত করা সম্ভব হয়নি। আর সেই কারণেই বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের তিনটি ইউনিটের মধ্যে প্রতিটি ইউনিট সচল রাখতে প্রয়োজন হয় দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট থাকায় যেকোনো সময় বন্ধের ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প হিসেবে একটি ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প দিয়ে চলে আসছিল এর উৎপাদন কার্যক্রম। ফলে মাঝে মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে বন্ধ হতো তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উৎপাদন। একাধিকবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বিষয়টি অবগত করলে তারা অজ্ঞাত কারণে তা আমলে নেয়নি। সর্বশেষ গত ৬ সেপ্টেম্বর মেরামতের মাধ্যমে ইউনিটটি চালু করা হলে দুই দিনের মাথায় আবারো সোমবার (৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে বন্ধ হয়ে যায় সকল কার্যক্রম।

সূত্র মতে তৃতীয় ইউনিটে উৎপাদিত ১৯০ থেকে ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হচ্ছিল। এটি সচল রাখতে প্রতিদিন দুই হাজার ২০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হয়।

সূত্রটি আরও জানায়, ৫২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতার বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতা সম্পন্ন ২ নম্বর ইউনিটটি ২০২০ সালের নভেম্বর থেকে সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ আছে। ২ নম্বর ইউনিট ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলেও উৎপাদন হতো ৬৫-৭০ মেগাওয়াট।

একইসঙ্গে শুক্রবার (৬ সেপ্টম্বর) রাত ৯টার পর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কয়লাভিত্তিক ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন ১ নম্বর ইউনিটি সংস্কার কাজের জন্য বন্ধ করা হয়। ১ নম্বর ইউনিট ১২৫ মেগাওয়াট ক্ষমতার হলেও উৎপাদন হতো ৬০-৬৫ মেগাওয়াট। একসঙ্গে তিনটি ইউনিট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় দিনাজপুরসহ উত্তরাঞ্চলের ৮ জেলায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বিঘ্নিত হবে বলে ধারণা করছে সূত্রটি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কোল ইয়ার্ডে কয়লা মজুত রয়েছে ২ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনি থেকে দৈনিক কয়লা সরবরাহ করা হয় প্রায় ৩ থেকে সাড়ে তিন হাজার মেট্রিক টন। কিন্তু তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটির তিনটি ইউনিট চালু রেখে স্বাভাবিক উৎপাদনের জন্য দৈনিক প্রায় ৪ হাজার ৮০০ মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন। তবে তিনটি ইউনিট একসঙ্গে কখনোই চালানো হয়নি। বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির সরবরাহকৃত কয়লার ওপর নির্ভর করে বড়পুকুরিয়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

বড়পুকুরিয়া কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. আবু বক্কর সিদ্দিক মুঠোফোনে জানান, প্রতিটি ইউনিটের জন্য দুটি করে ইলেকট্রো হাইড্রোলিক অয়েল পাম্প থাকে। যা ওই ইউনিটের জ্বালানি হিসেবে তেল সরবরাহের মাধ্যমে উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখে। কিন্তু ২০২২ সাল থেকেই তৃতীয় ইউনিটের দুটির মধ্যে একটি পাম্প নষ্ট হয়ে যায়। এরপর থেকে একটি পাম্প দিয়েই ঝুঁকি নিয়ে উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছিল। কিন্তু ওই একটি পম্পও সোমবার নষ্ট হয়ে যাওয়ার পর দিনব্যাপী চেষ্টা করেও চালু করা সম্ভব হয়নি। ফলে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে উৎপাদন।

তিনি আরও জানান, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে জানানো হয়েছে, তারা দু’সপ্তাহ সময় চেয়েছে। চিন থেকে মেশিন এলেই উৎপাদন শুরু করা যাবে।

- Advertisment -spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়