বিনোদন বাজার রিপোর্ট
দেশের প্রখ্যাত নাট্যকার ও গবেষক সেলিম আল-দীনের আজ জন্মদিন। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার। ১৯৪৯ সালের এই দিনে এ নাট্যব্যক্তিত্ব ফেনীর সেনেরখিলে জন্মগ্রহণ করেন।
তার সৃষ্টিশীলতার কিরণচ্ছটা ভারতবর্ষ ছাড়িয়ে ইউরোপ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। বিশ্বসাহিত্যের ধ্রুপদী ধারায় শ্রমজীবী মানুষ এবং বাংলার আবহমানকালের সংস্কৃতিকে এক মহাকাব্যিক ব্যাপ্তি দানে সার্থক হন তিনি।
১৯৬৭ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রথম বর্ষ স্নাতক সম্মান শ্রেণিতে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে এম এ ডিগ্রি নেওয়ার পর কর্মক্ষেত্র হিসেবে বেছে নেন অধ্যাপনাকে।
১৯৭৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন এবং আমৃত্যু এই বিশ্ববিদ্যালয়েই ছিলেন তিনি। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন সেলিম আল দীন। সেলিম আল দীন তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থায় কপিরাইটার হিসেবে। চাকরিজীবন শুরু করলেও পরে তিনি শিক্ষকতা পেশাই বেছে নেন। ১৯৮৬ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে তার উদ্যোগেই খোলা হয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ‘মধ্যযুগের বাংলা নাট্য’ শীর্ষক অভিসন্দর্ভের জন্য পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
অধ্যাপনার পাশাপাশি এ দেশের নাট্যশিল্পকে বিশ্বনাট্যধারার সঙ্গে সম্পৃক্তে সমাসীন করার লক্ষ্যে ১৯৮১-৮২ সালে দেশব্যাপী গড়ে তোলেন বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার। এর আগেই অবশ্য তার আজীবনের শিল্পসঙ্গী নাট্যনির্দেশক নাসির উদ্দিন ইউসুফের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ঢাকা থিয়েটার প্রতিষ্ঠা করেন।
তিনি নাট্যকার পরিচয়ের বাইরে ছিলেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, গবেষক, সংগঠক, নাট্যনির্দেশক এবং শিল্পতাত্ত্বিক। তার উল্লেখযোগ্য নাটক সর্পবিষয়ক গল্প ও অন্যান্য নাটক, জন্ডিস ও বিবিধ বেলুন, বাসন, শকুন্তলা ও কিত্তনখোলা, কেরামতমঙ্গল, প্রাচ্য, কিত্তনখোলা, হাতহদাই, যৈবতী কন্যার মন, চাকা, হরগজ, একটি মারমা রূপকথা, বনপাংশুল, নিমজ্জন, ধাবমান ইত্যাদি। উল্লেখযোগ্য কয়েকটি পুরস্কার হলো বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, নান্দীকার পুরস্কার, খালেকদাদ সাহিত্য পুরস্কার, একুশে পদক, অলক্ত সাহিত্য পুরস্কার ইত্যাদি।
রোববার সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে নাট্যসংগঠন স্বপ্নদল আয়োজন করেছে ‘নাট্যাচার্য সেলিম আল দীন-জন্মোৎসব-২০২৪’। বর্তমানে দেশের সার্বিক পরিস্থিতিতে সন্তষজনক নয় বলে মিলনায়তন বন্ধ থাকায় সংক্ষিপ্ত আয়োজনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে স্বপ্নদল।
এ ছাড়া নাট্যাচার্যের জন্ম ও প্রয়াণদিবস স্মরণে স্বপ্নদলের নিয়মিত উৎসব আয়োজনের ৩০তম এ আসরের স্লোগান—‘বাংলা নাট্যের শিল্পশক্তি বিশ্ব করবে জয়, সেলিম আল দীন-রবীন্দ্রনাথ অমর অক্ষয়’।
আয়োজক সূত্রে জানা গেছে, আজ সকাল ১০টায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বপ্নদলের স্মরণ শোভাযাত্রা ও নাট্যাচার্যের সমাধিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ। রাত ৯টায় বিশেষ আয়োজন থাকছে ফেসবুক লাইভে নাট্যাচার্যের জীবন-কর্ম-দর্শন আলোচনাসহ ‘নাট্যনির্দেশনায় সেলিম আল দীন: নাট্যকারসত্তায় দ্বৈতাদ্বৈতের অনুরণন’ শীর্ষক ওয়েবিনার। মূল আলোচনা উপস্থাপন করবেন স্বপ্নদলের প্রধান সম্পাদক জাহিদ রিপন। জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদালয় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক রশীদ হারুনের সভাপতিত্বে এতে আলোচনা করবেন ইসলাম শফিক, আলী হাসান, ফজলে রাব্বী সুকর্নো প্রমুখ। সঞ্চালনা করবেন স্বপ্নদলের জ্যেষ্ঠ সদস্য নাট্যজন জুয়েনা শবনম।
এ ছাড়া সেলিম আল দীনের জন্মবার্ষিকী স্মরণে কয়েক দিন পর জাহিদ রিপনের নির্দেশনায় নাট্যাচার্য উদ্ভাবিত আধুনিক বর্ণনাত্মক বাংলা নাট্যরীতিতে নির্মিত স্বপ্নদল প্রযোজনা ‘হরগজ’-এর বিশেষ মঞ্চায়নও অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, ২০০৮ সালের ১৪ জানুয়ারি সেলিম আল দীন ঢাকায় মারা যান। পরে তাকে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সমাহিত করা হয়।