বিনোদন বাজার রিপোর্ট
অবশেষে দেশে পৌঁছালো এমভি আবদুল্লাহ। বাংলাদেশ সময় সোমবার (১৩ মে) সন্ধ্যা ৬ টা ২০ মিনিটে কুতুবদিয়ায় নোঙর করেছে জাহাজটি। সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার ৬৪ দিন পর দেশের জলসীমায় নোঙর করল জাহাজটি। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর জাহাজের ২৩ নাবিক সমুদ্রপথে পৌঁছলেন দেশে। সেইসঙ্গে অবসান হলো পরিবারের উৎকণ্ঠার।
জাহাজের মাস্টার ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ আবদুর রশিদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।
কয়লা নিয়ে মোজাম্বিক থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ফেরার সময় জিম্মি জাহাজটি এবার দেশের পথে বহন করছে ৫৬ হাজার মেট্রিক টন চুনাপাথর। কুতুবদিয়ায় চুনাপাথরের কিছু চালান খালাস করে জাহাজটি ১৫ মে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছাবে। সেখানে বাকি মালামাল খালাস করার পর বন্দর জেটিতে আসবে এমভি আব্দুল্লাহ। এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে জিম্মিদশা থেকে মুক্ত নাবিকদের চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হবে।
ইতিমধ্যে এমভি আবদুল্লাহর দায়িত্ব বুঝে নিতে নতুন নাবিকদের একটি টিম রওনা দিয়েছে। তাদের বহনকারী লাইটার জাহাজটির নাম এমটি জাহান মনি-৩। এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক ওই জাহাজেই আজ মঙ্গলবার বিকালে ফিরবেন। তাদের বরণ করা হবে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের (এনসিটি) এক নম্বর জেটিতে। সেখানে তাদের বরণ করতে উপস্থিত হয়েছেন স্বজনরা। পাশাপাশি কেএসআরএমের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও থাকবেন।
এমভি আবদুল্লাহর চিফ অফিসার আতিকুল্লাহ খানের ছোট ভাই আবদুর নূর খান আসিফ সোমবার রাতে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, “আমরা পরিবারের সবাই এই দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম।”
সমুদ্রগামী জাহাজের ক্যাপ্টেন মেরিনার আতিক ইউএ খান সোমবার রাতে গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, ২৩ জন নাবিক মঙ্গলবার এমভি আবদুল্লাহ ছাড়বেন। তাদের স্থলে দায়িত্ব নেবেন নতুন নাবিকরা। পুরোনো নাবিকরা কবে দায়িত্বে ফিরতে পারেন এ প্রশ্নে তিনি বলেন, সব নাবিক হয়তো ফের এ পেশায় নাও ফিরতে পারেন। ভারী অস্ত্রের সামনে কাটিয়েছেন দীর্ঘ ১ মাস। এ সময় অনেকেই জীবিত থাকা নিয়ে সন্দিহান ছিলেন। তাদের ট্রমা কাটিয়ে উঠতে সময় লাগতে পারে। আমি জেনেছি, ইতিমধ্যে এক নাবিক জানিয়েছেন আর কখনো জাহাজের কাজে যুক্ত হবেন না তিনি।
সোমবার রাত ৮টা ৫ মিনিটে জাহাজটিতে অবস্থান করা নাবিক নূর উদ্দিন এক হোয়াটসঅ্যাপ বার্তায় বলেন, “আমাদের জাহাজ সন্ধ্যা ৬টায় নোঙর করেছে। আমরা জাহাজে ভালো আছি। কোনো সমস্যা নেই।”
শুনেছি আপনি চাকরি ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, হ্যাঁ। আপাতত ভালো লাগছে না। অন্য কিছু করতে না পারলে আবার আসতে হবে এ পেশায়।
গত ১২ মার্চ সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হয় এমভি আবদুল্লাহ। ১ মাস পর গত ১৪ এপ্রিল ভোর রাতে মুক্ত হয় জলদস্যুদের কবল থেকে। এরপর জাহাজটি পৌঁছায় দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনা পাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সবমিলিয়ে ৬৪ দিন পর মুক্ত নাবিকরা দেশের মাটিতে ফিরেছেন।
২৯ এপ্রিল জাহাজটি ৫৬ হাজার টন চুনাপাথর বোঝাই করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের মিনা সাকার বন্দর ত্যাগ করে। আফ্রিকার মোজাম্বিকের মাপুতো বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাত যাওয়ার পথে গত ১২ মার্চ দুপুরে এমভি আবদল্লাহকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয় সোমালিয়ান দস্যুরা। ভারী অস্ত্রের মুখে দস্যুরা জাহাজের ইঞ্জিনরুম নামে পরিচিত ব্রিজে ২৩ নাবিককে আটকে রাখে। কয়েক দফা দিক-পরিবর্তনের পর সোমালিয়ায় জলদস্যুদের ডেড়ায় জাহাজটি জিম্মি করে রাখে ১ মাস। ৫০ লাখ মার্কিন ডলার মুক্তিপণ পাওয়ার পর ১৪ এপ্রিল বাংলাদেশ সময় ভোর ৩টা ৮ মিনিটের দিকে এমভি আবদুল্লাহ থেকে জলদস্যুরা নেমে যায়। ছোট বিমান থেকে মুক্তিপণ বাবদ ৩ ব্যাগ মার্কিন ডলার এমভি আবদল্লাহর কাছে সাগরে ছুড়ে ফেলা হয়। স্পিড বোট দিয়ে দস্যুরা ব্যাগ ৩টি কুড়িয়ে নেয়। এরপর জাহাজেই বিভক্ত হয়ে ৫০ জলদস্যু ডলারগুলো গুনে নেয় এবং ডলারগুলো জাল কি না তা নিশ্চিত হয়। এরপর তারা নেমে যায় এমভি আবদুল্লাহ থেকে। ১৪ এপ্রিল ভোর রাতেই সোমালিয়ার উপকূল থেকে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরের দিকে রওনা দেয় এমভি আবদুল্লাহ। এ সময় জলদস্যুদের কবল থেকে প্রথমবারের মতো মুক্তির স্বাদ পান ২৩ নাবিক। ২১ এপ্রিল এমভি আবদুল্লাহ সংযুক্ত আরব আমিরাতের আল হামরিয়া বন্দরে পৌঁছে। সেখানে ৫৫ হাজার টন কয়লা খালাস করা হয়। চার দিন পর জাহাজটি দুবাইয়ের আরেক বন্দর মিনা সাকার উদ্দেশে রওনা দেয়। চুনা পাথর বোঝাই করার পর এমভি আবদুল্লাহ চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে মিনা সাকার বন্দর ত্যাগ করে।
এমভি আবদুল্লাহর পুরোনো নাম ছিল গোল্ডেন হক। কবির গ্রুপের অঙ্গপ্রতিষ্ঠান এসআর শিপিং জাহাজটি কিনে নেওয়ার পর নতুন নাম দেওয়া হয় এমভি আবদুল্লাহ। ২০১৬ সালে তৈরি কার্গো জাহাজটির দৈর্ঘ্য ১৮৯ দশমিক ৯৩ মিটার এবং প্রস্থ ৩২ দশমিক ২৬ মিটার। জাহাজটির ড্রাফট (পানির লেভেল থেকে নিচের অংশ পর্যন্ত) ১২ মিটার। পানির নিচে ডুবন্ত অংশ চার তলা ভবনের সমান।
সর্বশেষ
সর্বশেষ খবরে জানা যায়, সোমালিয়ান দস্যুদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিক চট্টগ্রাম নগরের পথে রয়েছেন। মঙ্গলবার বেলা ১২টার দিকে নতুন নাবিকদের কাছে দায়িত্ব হস্তান্তর শেষে লাইটারেজ জাহাজ এমভি জাহান মণি-৩ এ করে তাঁরা বন্দর জেটির উদ্দেশে রওনা হন। বিকেল চারটা নাগাদ জাহাজটি জেটিতে পৌঁছাতে পারে। কেএসআরএম গ্রুপের মুখপাত্র মিজানুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।