বিনোদন বাজার রিপোর্ট
গুরুতর অসুস্থ বাংলাদেশের প্রবীণ চিত্রশিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার। রাজধানীর বেসরকারি স্কয়ার হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে চিকিৎসাধীন তিনি।
গত বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে তাকে। পরে অবস্থার অবনতি হওয়ায় গত শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।
মুস্তাফা মনোয়ারের স্ত্রী মেরী মনোয়ার গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, মুস্তাফা মনোয়ারের অবস্থা বেশ জটিল। গত মে মাসে ভারত থেকে চিকিৎসার পর তাকে দেশে নিয়ে আসা হয়। এরপর তাকে রেডিয়েশন থেরাপি দেওয়া হয়েছে।
মুস্তাফা মনোয়ারের ব্যক্তিগত সহকারী রুবেল মিয়া জানান, বুধবার বিকেলে তিনি বাসায় মাথা ঘুরে পড়ে গেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
বাংলাদেশের পাপেটম্যান হিসেবেখ্যাত শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার দীর্ঘদিন ধরে নিউমোনিয়া ও প্রোস্টেট ক্যানসারে ভুগছেন। গত ১ সেপ্টেম্বর ছিল শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ারের ৮৯তম জন্মদিন।
বাংলাদেশের চিত্রকলায় অসামান্য অবদান রয়েছে মুস্তফা মনোয়ারের। এছাড়াও তিনি পাপেট বা পুতুলনাচের অঙ্গনে একজন পথিকৃৎ। এজন্য তাকে ‘পাপেটম্যান’ বলা হয়। পুতুলনাচকে তিনি বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন।
তিনি চিত্রকলায় বহু প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক উন্নয়নে কাজ করেছেন। এছাড়া চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে চারুকলা বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
সব্যসাচী এই শিল্পী একাধারে চারুশিল্পী, নাট্যনির্দেশক ও শিল্প গবেষক। বাংলাদেশের পাপেট শিল্পকে নতুন মাত্রা দেওয়া মুস্তাফা মনোয়ার কবি গোলাম মোস্তফার ছেলে।
শিল্পকলায় অবদানের জন্য ২০০৪ সালে একুশে পদক পাওয়া মুস্তফা মনোয়ারের ৮৯তম জন্মদিন ছিল গত ১ সেপ্টেম্বর।
বর্ণিল কর্মজীবনে আরও অনেক পুরস্কার পেয়েছেন খ্যাতনামা এই শিল্পী। ১৯৯০ সালে টিভি নাটকের জন্য টেনাশিনাস পদক, ১৯৯২ সালে চারুশিল্পে বিশেষ অবদানের জন্য বাংলাদেশ চারুশিল্পী সংসদ পুরস্কার, ১৯৯৯ সালে শিশু শিল্পকলা কেন্দ্র কিডস কালচারাল ইনস্টিটিউট, চট্টগ্রাম কর্তৃক কিডস সম্মাননা পদক, ২০০২ সালে চিত্রশিল্প, নাট্য নির্দেশক এবং পাপেট নির্মাণে অবদানের জন্য শিশুকেন্দ্র থেকে বিশেষ সম্মাননা লাভসহ বিভিন্ন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
গুণি এ চিত্রশিল্পীর জন্ম ১৯৩৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর যশোরের মাগুরা মহকুমার (বর্তমান জেলা) শ্রীপুরে। তিনি নাকোল গ্রামে মামার বাড়িতে জন্মগ্রহণ করেন।
তার বাবা কবি গোলাম মোস্তফার পৈত্রিক নিবাস ছিল ঝিনাইদহ জেলার শৈলকূপা উপজেলার মনোহরপুর গ্রামে। পাঁচ বছর বয়সে মা জমিলা খাতুন মারা যান। ছয় ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট তিনি।
নারায়ণগঞ্জ গভর্নমেন্ট স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে কলকাতার স্কটিশ চার্চ কলেজে বিজ্ঞানে ভর্তি হন। সেখানে তিনি পড়াশোনা না করে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে ভর্তি হন। ১৯৫৯ সালে কলকাতা চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয় থেকে ফাইন আর্টসে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন।
১৯৬৫ সালে মেরী মনোয়ারের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের এক ছেলে সাদাত মনোয়ার ও এক মেয়ে নন্দিনী মনোয়ার।
কর্মজীবন শুরু করেন পূর্ব পাকিস্তান চারু ও কারুকলা মহাবিদ্যালয়ে প্রভাষক হিসেবে। পরে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনের উপ-মহাপরিচালক, শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক, জাতীয় গণমাধ্যম ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকার জেনারেল ম্যানেজার ও এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন।
এছাড়া জনবিভাগ উন্নয়ন কেন্দ্রের চেয়ারম্যান ও এডুকেশনাল পাপেট ডেভেলপমেন্ট সেন্টারের প্রকল্প পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন।