Monday, May 20, 2024
spot_img
Homeঅন্যান্যআবারও বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রাজধানী ঢাকা

আবারও বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে রাজধানী ঢাকা

বিনোদন বাজার রিপোর্ট 

“অন্নচাই, প্রাণচাই, আলোচাই, চাইমুক্তবায়ু, চাইবল, চাইস্বাস্থ্য, আনন্দ-উজ্জ্বলপরমায়ু।”

বর্তমান বাংলাদেশে তথা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বায়ু দূষণের মত ভয়ংকর বিপর্যয় মহামারী আকার ধারণ করেছেকবিরভাষায় ‘মুক্ত বায়ু’ আর ‘আনন্দ-উজ্জ্বল পরমায়ু’ সেখানে বিরাজ করে না ।

বর্তমান সময়ে বিভিন্নভাবে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে, যার কারণে স্বাস্থ্য সমস্যাও দিন দিন বেড়ে চলেছে। মাটি, জল, ইত্যাদির পাশাপাশি বেড়ে চলেছে বায়ুদূষণের মাত্রাও। আর তাই আবারও বায়ুদূষণের তালিকায় শীর্ষ অবস্থানে উঠে এলো রাজধানী ঢাকা। বুধবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সকাল ৮টা ৩১ মিনিটে বায়ুর মান পর্যবেক্ষণকারী সংস্থা এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্সের (আইকিউএয়ার) সূচক থেকে জানা গেছে এ তথ্য।

বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকার স্কোর হচ্ছে ২৭৪ অর্থাৎ ঢাকার বায়ু খুবই অস্বাস্থ্যকর পর্যায়ে রয়েছে। বায়ুদূষণের তালিকায় দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে চীনের শেনইয়াং। শহরটির স্কোর হচ্ছে ১৯৩ অর্থাৎ সেখানকার বায়ু অস্বাস্থ্যকর।

দূষণ তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে কিরগিজস্তানের বিশকেক। এই শহরটির স্কোর ১৭৬ অর্থাৎ সেখানকার বায়ুর মানও অস্বাস্থ্যকর।

চতুর্থ অবস্থানে রয়েছে ভারতের কলকাতা এবং পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে চীনের আরেক শহর উহান।

স্কোর শূন্য থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে বায়ুর মান ভালো বলে বিবেচিত হয়। ৫১ থেকে ১০০ হলে মাঝারি বা সহনীয় ধরা হয় বায়ুর মান। সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয় ১০১ থেকে ১৫০ স্কোর। ১৫১ থেকে ২০০ পর্যন্ত অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচিত হয়। স্কোর ২০১ থেকে ৩০০ হলে খুবই অস্বাস্থ্যকর বলে বিবেচনা করা হয়। এছাড়া ৩০১-এর বেশি হলে তা দুর্যোগপূর্ণ বলে বিবেচিত হয়।

বায়ু দূষণ, দূষণের কারণ ও প্রতিকার:

সভ্যতা যত এগিয়ে যাচ্ছে, দূষণের মাত্রাও পাল্লা দিয়ে বেড়েছে মানবজাতির অগ্রগতির সাথে। বিভিন্নভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে আমাদের বাসযোগ্য পরিবেশ। বিভিন্ন উপায়ে ক্ষতিকারক পদার্থ বাতাসে মিশে গিয়ে বায়ু দূষণ ঘটছে, বায়ু দূষণের ফলে বায়ুমণ্ডলে ওজোন স্তরেও প্রভাব পড়ছে, ক্রমে পাতলা হয়ে যাচ্ছে ওজোন স্তুর, যার প্রভাব পড়ছে জলবায়ুর উপর। দিনের পর দিন জলবায়ুর অস্বাভাবিক পরিবর্তনের মাধ্যমে তা স্পষ্ট।

গ্রামাঞ্চলের তুলনায় শহরাঞ্চলে বায়ুদূষণ বেশি হয়। এর কারণ স্পষ্ট; শিল্প, যানবাহন এবং নগরায়ন। মানবজাতি এই বায়ু দূষণের প্রভাবে বিভিন্ন রোগের সম্মুখীন হচ্ছে, তাছাড়াও আরো নানারকম সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বায়ু দূষণের দুই রকম কারণ রয়েছে, এক হল প্রাকৃতিক এবং অপরটি মানবসৃষ্ট।

বায়ুদূষণের প্রাকৃতিক কারণ,(Natural causes of air pollution)

প্রাকৃতিক উপায়ে বায়ু বিভিন্ন ভাবে দূষিত হয়, যেমন –

 ১। দাবানল
২। আগ্নেয়গিরি থেকে অগ্ন্যুৎপাত
৩। ধূলিঝড়ের ফলে বায়ু দূষিত হয়
৪। পচনের ফলে নির্গত গ্যাস

বায়ু দূষণে মানবসৃষ্ট কারণ, (Man made reasons of Air pollution) 

১। কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়া

২। যানবাহনের বিষাক্ত ধোঁয়া

৩। তাপবিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও পারমানবিক কেন্দ্র
৪। অন্যান্য বায়ুদূষণকারী বিষয় :

সভ্যতার অগ্রগতির ফলে মানুষ রোজই অরণ্য সম্পদ ধ্বংস করে চলেছে। কিন্তু এই অরণ্য ধবংসের ফলেই অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে, যা বিভিন্নভাবে সমস্যার সৃষ্টি করছে।

অপচনশীল আবর্জনা তথা বিভিন্ন রাসায়নিক বর্জ্য পুড়ানোর ফলে উৎপন্ন হয় ধোঁয়া, ছাই যা থেকেও বায়ু দূষিত হয়।

শহরাঞ্চলের বেশিরভাগ মানুষ বাড়িতে Ac বা শীততাপ নিয়ন্ত্রক যন্ত্র ব্যবহার করেন, যার থেকে নির্গত হয় CFC, অর্থাৎ ক্লোরো ফ্লোরো কার্বন, যা বাতাসে মিশে ওজোন স্তরকে ধ্বংস করছে।

বায়ু দূষণের ফলে সৃষ্ট রোগ, (Diseases caused by air pollution) 

বায়ুদূষণের প্রভাবে রোজই কেউ না কেউ অসুস্থ হচ্ছেন। অনেকের ক্ষেত্রে শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। মানুষ এই বায়ু দূষণের ফলে ফুসফুসের ক্যান্সার, শ্বাসজনিত রোগ যেমন হাঁপানি, ল্যারিঞ্জাইটিস, ব্রংকাইটিস সহ আরো বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। তাছাড়াও দূষিত বায়ু হৃদরোগ সহ মস্তিষ্ক, লিভার বা কিডনির দীর্ঘমেয়াদি সমস্যাও তৈরি করতে পারে।

বিশ্বব্যাপী যেসব অসংক্রামক রোগে মানুষের সবচেয়ে বেশি মৃত্যু ঘটে তার অধিকাংশই বায়ু দূষণজনিত। গবেষণা অনুযায়ী জানা যায় যে, বহু মানুষ প্রতি বছর বায়ুদূষণ জনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালে মারা যায়। তাই আজ থেকেই সতর্ক হতে হবে এবং বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে এগিয়ে আসতে হবে।

বায়ুদূষণ কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়, (Ways to control air pollution)

বায়ুমন্ডল কে দূষণ মুক্ত রাখতে হলে আমাদের সকলকে এগিয়ে আসতে হবে এবং নিম্নলিখিত পদক্ষেপ অবলম্বন করতে হবে :

বনসৃজন

আমরা সকলেই জানি যে অক্সিজেন ও কার্বন ডাই অক্সাইডের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে গাছ সাহায্য করে, তাই অরণ্য ধ্বংস না করে বরং প্রচুর পরিমানে বৃক্ষ রোপন করলে বায়ুমণ্ডলে বিভিন্ন গ্যাসের ভারসাম্য ঠিক থাকবে, যার ফলে বায়ু দূষণ এর প্রভাব কম হবে।

অপ্রচলিত শক্তিগুলোর ব্যবহার

অন্যান্য দূষণ সৃষ্টিকারী জ্বালানি ব্যবহার না করে বরং দূষণ মুক্ত সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি, জোয়ার ভাটার শক্তি ইত্যাদির ব্যবহার বৃদ্ধি করতে হবে।

বিশুদ্ধ জ্বালানীর ব্যবহার বৃদ্ধি

সালফার বিহীন কয়লার  ব্যবহার তথা সিস বিহীন পেট্রোল ব্যবহার করলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

বায়ু পরিশোধক যন্ত্র স্থাপন

বায়ুদূষণের উৎস গুলিতে যেমন শিল্পকারখানা , তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র, এই সব স্থানে বায়ু পরিশোধক যন্ত্রপাতি স্থাপন করতে হবে যাতে বায়ু দূষণের পরিমান হ্রাস পায়। কারখানাগুলোর চিমনি থেকে নির্গত ধোঁয়া থেকে ইলেকট্রোস্ট্যাটিক প্রেসিপিটেটরের মাধ্যমে বায়ু থেকে ধূলিকনা পৃথক করে নেওয়ার মতো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে এবং গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে ক্যাটালেটিক কর্নভার্টার বসিয়ে বায়ুদূষণ হ্রাস করা সম্ভব হবে।

কঠোর আইন প্রনয়ন

দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ দ্বারা বায়ুদূষণ প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করার মাধ্যমে দূষণ কারীদের বিরুদ্ধে সঠিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হবে।

জনসচেতনতা বৃদ্ধি

বায়ুদূষণ সৃষ্টির উৎস এবং এর কুফল সম্পর্কে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বোধ জাগিয়ে তুলতে হবে, তবেই বায়ু দূষণ রোধ করা সম্ভব। 

পরিশেষে বলা যায়, বায়ুদূষণ রোধ করা এবং আমাদের পরিবেশ ও সভ্যতাকে রক্ষা করার দায়িত্ব আমাদের হাতেই। উপরিউক্ত বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে সচেতনতার সাথে এগিয়ে গেলে সবাই মিলে বায়ুদূষণ রোধ করতে সক্ষম হতে পারবো।
- Advertisment -spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়