বিনোদন বাজার রিপোর্ট
এসএসসি ও সমমানের ফল প্রকাশের পর উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের স্বপ্ন এখন পছন্দের কলেজে ভর্তি হওয়া। এসএসসির ফল প্রকাশের উচ্ছ্বাসের মধ্যেই অভিভাবকদের ভর্তি নিয়ে উদ্বেগ শুরু হয়েছে। সারা দেশে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তিযোগ্য কলেজ ও মাদরাসার সংকট না থাকলেও সংকট রয়েছে মানসম্মত কলেজের। সে হিসেবে ভালো ফল করা লাখ লাখ শিক্ষার্থী তাদের পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবেন না। আবার দেশের সব কলেজ তাদের নির্ধারিত সংখ্যক আসনের বিপরীতে শিক্ষার্থী পাবে না। কারণ, আসনের তুলনায় ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থী কম। আগামী ২৬ মে থেকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি আবেদন শুরু হবে।
রোববার প্রকাশিত হয়েছে এসএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফলাফল। এতে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১৬ লাখ ৭২ হাজার ১৫৩ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ফল জিপিএ-৫ পেয়েছেন মোট এক লাখ ৮২ হাজার ১২৯ জন শিক্ষার্থী। সারা দেশে প্রায় সাড়ে ১১ হাজার কলেজে আসন আছে ৩৩ লাখের বেশি। এসএসসি পাস করা সব শিক্ষার্থী ভর্তি হওয়ার পরও প্রায় ১৬ লাখ আসন ফাঁকা থাকবে।
শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তারা বলছেন, ভালো মানের কলেজের সংকট বরাবরই ছিল। এ কারণেই হাতে গোনা কলেজে ভর্তির জন্য একপ্রকার যুদ্ধ চলে। তবে আশার কথা হলো, যত শিক্ষার্থী পাশ করেছে তার চেয়ে অনেক বেশি আসন রয়েছে। ফলে আসন নিয়ে কোনো সংকট নেই।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রাজধানীসহ সারা দেশে ২০০ থেকে ২৫০ কলেজ রয়েছে, যেখানে ভর্তির জন্য শিক্ষার্থীদের আগ্রহ থাকে বেশি।
এর মধ্যে প্রায় ২০০টি হলো কলেজ ও মাদ্রাসা, ৪৭টি সরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, একটি গ্রাফিক্স আর্ট ইনস্টিটিউট ও একটি গ্লাস অ্যান্ড সিরামিকস ইনস্টিটিউট রয়েছে।

৫১৫টি বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থাকলেও ডজনখানেক প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থী আকৃষ্ট করার ক্ষমতা রাখে। ডিপ্লোমা ইন কমার্সের সাত প্রতিষ্ঠান ও বিএমটি এবং ভোকেশনাল প্রতিষ্ঠানেও কিছু শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। এই কলেজগুলোতে প্রায় ১ লাখ আসন রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখা আছে। ফলে কলেজে ভর্তির ক্ষেত্রে ঐ প্রতিষ্ঠানের বিদ্যালয় শাখার শিক্ষার্থীরা অগ্রাধিকার পাবে। তাই বাইরের প্রতিষ্ঠানের জিপিএ-৫ পাওয়া অনেক শিক্ষার্থী এসব কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না। ভিকারুননিসা নূন, রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, আইডিয়ালসহ নামি কলেজগুলোর বিদ্যালয় শাখা রয়েছে। ফলে এসব কলেজে নিজ স্কুল শাখার শিক্ষার্থী ভর্তির পর খুব কমসংখ্যক আসনই শূন্য থাকে। ফলে জিপিএ-৫ পেয়েও ৮০ হাজার শিক্ষার্থী পছন্দের কলেজে ভর্তির সুযোগ পাবে না। এর বাইরে নটর ডেমসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করবে।
ভর্তি নিয়ে বেশি চাপ পড়বে ঢাকার কলেজগুলোতে। অনেক শিক্ষার্থীকে তাদের পছন্দের বাইরে কলেজে ভর্তি হতে হবে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ড থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৯ হাজার ১৯০ জন। এছাড়া দেশের অন্যান্য প্রতিষ্ঠান থেকে ভর্তি হওয়ার জন্য ঢাকায় আসবে অনেকেই। অথচ রাজধানীর ভালো কলেজগুলোতে ২০ হাজারের বেশি আসন নেই। ফলে ভর্তিযুদ্ধ হবে মূলত ঢাকাতেই।
মনিরুল ইসলাম নামে এক শিক্ষক বলেন, কলেজে ভর্তির জন্য নামি কলেজ খোঁজার কোনো প্রয়োজন নেই। বাড়ির পাশের কলেজকেই পছন্দ করা উচিত। একাদশে ভর্তির পর দুই বছর পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে হবে। বাড়ি থেকে দূরে কলেজ হলে আসা যাওয়ার ক্ষেত্রে সময় অপচয় হবে। শারীরিক পরিশ্রমও হবে। এতে পড়াশোনায় ক্ষতি হবে। তাই ভর্তির জন্য বাড়ির পাশের কলেজ পছন্দ করা উচিত।

আমিনুর রহমান নামে এক শিক্ষক বলেন, আবেদনের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের উচিত সে কত নম্বর পেয়েছে তার দিকে খেয়াল রাখা। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থী যদি নির্ধারিত নামি পাঁচটি কলেজে আবেদন করে তাহলে ছিটকে পড়তে হবে। জিপিএ-৫ পেয়েও লাভ হবে না। তাই ভর্তির জন্য এ বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে।
আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের বলেন, প্রতি বছরের মতো এবার একাদশের আসন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না। শিক্ষার্থীরা যদি নিজ ফল ও নম্বরের দিকে নজর রেখে আবেদন করে তাহলে সমস্যা হবে না।
প্রতি বছরের মতো এবারও একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য একটি সমন্বিত নীতিমালার খসড়া তৈরি করেছে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি। আজ (সোমবার) শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে বৈঠকে এ নীতিমালা চূড়ান্ত হওয়ার কথা রয়েছে। নীতিমালায় বড় কোনো পরিবর্তন না এলেও কলেজ ফি-তে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ ব্যাপারে তপন কুমার সরকার বলেন, একাদশে ভর্তির নীতিমালার খসড়া তৈরি করা হয়েছে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী আগামী ২৬ মে থেকে ভর্তির আবেদন নেওয়া হবে।