বিনোদন বাজার রিপোর্ট
সংগীতশিল্পী, নির্মাতা ও সঞ্চালক হাসান আবিদুর রেজা জুয়েল ইন্তেকাল করেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বেলা ১১.৫৩ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
শিল্পীর ছোট ভাই হাসান মহিবুর রেজা রুবেল মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, আজ বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে হাসান আবিদুর রেজা জুয়েলের জানাজা হবে।
গত ২৩ জুলাই রাতে বাসায় হঠাৎ শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সংগীতশিল্পী জুয়েলের। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) নেন। তার ফুসফুসে পানি জমে যায়। চিকিৎসকরা সেই পানি বেরও করেন। ধীরে ধীরে তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হচ্ছিল। কিন্তু আজ অবস্থার অবনতি হয়ে তার মৃত্যু হয়।
বৃহস্পতিবার গায়ক জুয়েলের স্ত্রী সঙ্গীতা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, সবাই ওর (জুয়েল) জন্য দোয়া করবেন, যেন লাইফ সাপোর্ট থেকে সুস্থভাবে ফিরতে পারে। শারীরিক সুস্থতার জন্য আপনারা সবাই দোয়া করবেন। ওর প্লাটিলেট অনেক কমে গেছে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাও কমে গেছে।
২০১১ সালে জুয়েলের লিভার ক্যানসার ধরা পড়ে। এরপর ফুসফুস এবং হাড়েও তা সংক্রমিত হয়। দীর্ঘদিন ধরে তার চিকিৎসা চলছিল। ক্যানসার থেকে কিছুটা সেরে উঠছিলেন এই শিল্পী। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকতে সীমিত পরিসরে গান, উপস্থাপনা করতেন তিনি। সুস্থ অবস্থায় তিনি বলেছিলেন, ‘বিশেষ শারীরিক-মানসিক অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে হচ্ছে আমাকে। আমার এখন প্রেরণা দরকার। আমার জন্য দোয়া করবেন সবাই।’
১৯৮৬ সালে ঢাকায় আসেন তিনি। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিকেন্দ্রিক সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনে জড়ান। সেই সময় বিভিন্ন মিডিয়ার সঙ্গে পরিচিতি হতে থাকে। ১৯৯২ সালে বের হয় জুয়েলের প্রথম গানের অ্যালবাম ‘কুয়াশা প্রহর’। তারপর থেকে প্রায় নিয়মিত বের হতো তার গানের অ্যালবাম। সেসবের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়তা পেয়েছিল ‘এক বিকেলে’। অ্যালবামটি জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর গায়কের নামই হয়ে যায় ‘এক বিকেলের জুয়েল’।
তার অনেক গান সুর করেছিলেন প্রয়াত ব্যান্ডতারকা আইয়ুব বাচ্চু। সেসময় তার গানকে ‘রোমান্টিক-স্যাড’ ঘরানার বলে অবিহিত করা হতো। সে প্রসঙ্গে সাংবাদিক রাসেল মাহমুদকে জুয়েল বলেছিলেন, ‘আমাকে আবিষ্কার করেছিলেন বাচ্চু ভাই (আইয়ুব বাচ্চু)। বলেছিলেন, গাও। তিনি বাজিয়েছেন, আমি গেয়েছি। আমার কণ্ঠ শুনে তিনিই ঠিক করে দিয়েছিলেন যে, আমাকে ‘রোমান্টিক-স্যাড ব্যালাড’ ধরনের গান গাইতে হবে।’
প্রসঙ্গত, ব্যান্ড সংগীত যখন বেশ আলোচনায় তখন নতুন জোয়ারে হাজির হন গায়ক জুয়েল। বাবা ব্যাংকার হওয়ার কারণে ছোটবেলায় দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকতে হয়েছে তাকে। তবে মা-বাবার অনুপ্রেরণাতেই সংগীতে অভিষেক তার। প্রথম শ্রেণিতে পড়ার সময় প্রতিবেশী একজনের কাছ থেকে সংগীতে হাতেখড়ি। আর মঞ্চে প্রথম গান করেন চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র থাকা অবস্থায়।
জুয়েলের অ্যালবামগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘আমার আছে অন্ধকার’, ‘একটা মানুষ’, ‘দেখা হবে না’, ‘বেশি কিছু নয়’, ‘বেদনা শুধুই বেদনা’, ‘ফিরতি পথে’, ‘দরজা খোলা বাড়ি’, ‘এমন কেন হলো’। সর্বশেষ ২০১৭ সালে বাপ্পা মজুমদারের সুরে মুক্তি পায় জুয়েলের একক গান ‘খুব সকালে’।