বিনোদন বাজার রিপোর্ট
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে অনেক সমস্যা হতে পারে। কিন্তু এই ঘুমই দুর্লভ হয়ে ওঠে কারও কারও কাছে। আপনি যদি নিয়মিত ৫ ঘণ্টারও কম সময় ঘুমান তাহলে বেড়ে যেতে পারে কার্ডিওভাসকুলার রোগের ঝুঁকি। সম্প্রতি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, কম ঘুমালে হার্ট অ্যাটাক এবং হার্ট সংক্রান্ত নানা অসুখের ঝুঁকি বাড়ে।
সাইকোসোম্যাটিক মেডিসিন জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা পত্রে লেখক ডক্টর অ্যান মেরি চ্যাং বলেন, বর্তমান সময়ে অধিকাংশ মানুষই প্রয়োজনীয় সময়ের চেয়ে কম সময় ঘুমান। গবেষণায় দেখা গেছে, অপর্যাপ্ত ঘুমের কারণে তাদের মধ্যে হার্টের রোগের ঝুকি বেড়ে যায়।
গবেষণায় বলা হয়েছে, কারও যদি ছোটবেলা থেকেই অল্প ঘুমের অভ্যাস থাকে তাহলে পরবর্তীতে তার হার্টের অসুখ দেখা দিতে পারে। গবেষকরা ২০ থেকে ৩৫ বছর বয়সী কিছু ব্যক্তির ওপর গবেষণা করেছেন এবং তাদের প্রতিদিনের রুটিনও উল্লেখ করেছেন। এই ব্যক্তিদের ওপর ১১ দিনের একটি পরীক্ষা করা হয়েছিল।
সেসব ব্যক্তিকে বলা হয়েছিল প্রথম ৩ দিনের জন্য সর্বোচ্চ ১০ ঘণ্টা করে ঘুমাতে। এরপর পরবর্তী ৫ দিন প্রতিদিন রাতে ৫ ঘণ্টা ঘুমাতে বলা হয়। এরপর আবার তাদের ১০ ঘণ্টা ঘুমাতে বলা হয়। এই সময়, গবেষকরা অংশগ্রহণকারীদের হৃদস্পন্দন এবং রক্তচাপ পরীক্ষা করেন। এর পাশাপাশি দিনে কয়েকবার নানাভাবে হৃদপিণ্ড পরীক্ষা করা হয়।
গবেষণায় দেখা গেছে, পরীক্ষা-নিরীক্ষার সময় যারা হাঁটতেন, তাদের রক্তচাপ তখন কম ছিল। যাদের ঘুম ভালো হয়েছে তাদের রক্তচাপ কমেছে। কিন্তু তারা যখন শুরুতে কম ঘুমাতেন এবং পরে বেশি ঘুমাতে শুরু করেন, তখন তাদের রক্তচাপও বেড়ে যায়। অর্থাৎ পরবর্তী পর্যাপ্ত ঘুম আগের কম ঘুমের ক্ষতিপূরণ করতে পারে না।
অনেকেই বিছানায় যান ঠিক সময় কিন্তু কিছুতেই ঘুম আসে না। ঘুমের জন্য অপেক্ষা করতে করতে রাতের প্রায় অর্ধেকটাই পার হয়ে যায়। এমন সমস্যায় যারা ভোগেন তাদের অনেকেই ঘুমানোর জন্য ঘুমের ওষুধের সাহায্য নিয়ে থাকেন। কিন্তু ঘুমের ওষুধের প্রতি অতিরিক্ত নির্ভরশীলতাও শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর।
বিশেষজ্ঞদের মতে ঘুম কম হলে শরীরের যেসব ক্ষতি হয়-
উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা বৃদ্ধি করে: পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বা কম হলে বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে, নিয়মিত পর্যাপ্ত না ঘুমালে মানব শরীরের ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো ঠিক মতো কাজ করতে পারে না। নষ্ট হতে পারে শরীরের হরমোনের ভারসাম্য। বাড়তে পারে উচ্চ রক্তচাপ, হাইপার টেনশনের মতো সমস্যা।
হার্টের সমস্যা বৃদ্ধি করে: আমরা যখন ঘুমাই তখন আমাদের হৃদপিণ্ড এবং রক্তনালী কিছুটা হলেও বিশ্রাম পায়। কিন্তু ঘুম না হলে বা কম হলে প্রতিনিয়ত কার্ডিওভ্যস্কুলার সমস্যা বাড়তে থাকে। এর ফলে হার্টের সমস্যা বাড়তে থাকে।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বাড়ায়: দীর্ঘদিন রাতে না ঘুমানো বা কম ঘুমানোর ফলে শরীরে ইনসুলিন উৎপাদন ব্যহত হয়। যার ফলে ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা নষ্ট করে: ঘুম মূলত আমাদের শরীরের ক্ষয়ক্ষতি পূরণ ও শক্তি সঞ্চয়ের একটি পন্থা। যখন আমরা ঘুমাই, তখন শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার জন্য দায়ী ‘লিভিং অরগানিজম’ কাজ করতে থাকে। কিন্তু না ঘুমালে এই ‘লিভিং অরগানিজম’গুলো কাজ করতে পারে না। ফলে ক্রমশ শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমতে থাকে।
মানসিক স্বাস্থ্য নষ্ট হয়: মস্তিষ্কে ওরেক্সিন নামের একটি নিউরোট্রান্সমিটার আছে যা মস্তিষ্ককে সচল রাখতে সহায়তা করে। প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে ওরেক্সিন উৎপাদনের গতি মন্থর হয়ে যায়। মস্তিষ্কের কর্ম ক্ষমতা কমতে থাকে। মস্তিষ্ক পর্যাপ্ত পরিমাণ বিশ্রাম না পেলে অতিরিক্ত বিষণ্ণতা, হ্যালুসিনেশনের, স্মৃতিভ্রংশের মতো একাধিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। দিনে দিনে নিজের বিচার বিশ্লেষণ করার ক্ষমতাও লোপ পেতে পারে।
হজমের সমস্যা বৃদ্ধি করে: প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে বাড়তে পারে হজমের সমস্যাও। না ঘুমালে আমাদের শরীরের পাচন ক্রিয়ায় সাহায্যকারী অঙ্গ-প্রত্যঙ্গগুলো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। ফলে খাবার হজমে সহায়ক পাচক রসগুলো উপযুক্ত মাত্রায় নিঃসরণে বাধা পায়। তাই হজমের নানা সমস্যা শুরু হয়।
সুতরাং, ঘুম আমাদের জন্য অত্যন্ত জরুরী একটি পন্থা। আমাদের দৈহিক প্রায় সকল কার্যকলাপই ঘুমের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। তাই কোনও রকম অবহেলা না করে নিয়মিত প্রতিদিন অন্তত ৬-৭ ঘণ্টা ঘুমানো অত্যন্ত জরুরি। কিন্তু যদি নিয়মিত স্বাভাবিকভাবে ঘুম না আসে, তাহলে ইচ্ছেমতো ওষুধ না খেয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।