বিনোদন বাজার রিপোর্ট
কর্মবিরতি প্রত্যাহারের পর ঢাকা মহানগর এলাকায় সড়কে ফিরেছে ট্রাফিক পুলিশ। গত এক সপ্তাহ বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে কর্মবিরতিতে ছিল পুলিশ। সোমবার সকাল ৮টা থেকে রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন শুরু করেন।
এর আগে কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী শিক্ষার্থীদের আন্দোলন-সহিংসতার জেরে এক সপ্তাহের মতো রাজধানীর সড়কে ছিল না ট্রাফিক পুলিশ। পুলিশ শূন্য রাস্তায় ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে বাঁশি-লাঠি হাতে এ কয়েকদিন সড়কে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এ অচলাবস্থার পর সোমবার (১২ আগস্ট) রাজধানীর সড়কে কাজে ফিরেছেন ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা।
মতিঝিল, ফকিরাপুল, পল্টন, কাকরাইল, মালিবাগ, শান্তিবাগ, শাহবাগ, আগারগাঁও, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, বিজয় সরণি, জাহাঙ্গীর গেট ও মহাখালী ঘুরে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। কোথাও কোথাও পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে এক সঙ্গে কাজ করছেন।
কাকরাইল মোড়ে রমনা বিভাগের সার্জেন্ট সাব্বির আহমেদ বলেন, সকাল ৮টা থেকে আমার কাকরাইল মোড়ে দু’জন সার্জেন্ট ও সাতজন সদস্য দায়িত্ব পালন শুরু করেছি। তিনি বলেন, এখানে ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আরও আটজন আনসার সদস্য ও শিক্ষার্থীরা ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছেন।
সকালে সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দেখে অনেকেই স্বস্তি প্রকাশ করেছেন। আগারগাঁওয়ে মেহেদী হাসান নামে একজন পথচারী জানান, সড়কে ট্রাফিক পুলিশ দেখে ভালো লাগছে। আশা করি, সড়কে শৃঙ্খলা ফিরবে, পরিস্থিতিও স্বাভাবিক হবে।
প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশত্যাগের ঘটনায় রাজধানীর বিভিন্ন থানা, ট্রাফিক পুলিশ বক্স ও পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়। এতে অনেক পুলিশ সদস্য হতাহত হন। আতঙ্কে বেশিরভাগ থানা পুলিশশূন্য হয়ে পড়ে। সড়ক ছেড়ে যান ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরাও। এ অবস্থায় রাজধানীসহ সারা দেশের সড়কে ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা ভেঙে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে দায়িত্ব সামলাতে রাস্তায় দেখা গেছে বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ ও স্কুল শিক্ষার্থীদের।
মাথায় জাতীয় পতাকা, গলায় পরিচয়পত্র ঝুলিয়ে ট্রাফিক সিগন্যালে ঘাম ঝরান শিক্ষার্থীরা। তাদের বাঁশি আর হাতের ইশারায় চলছে নগরের সব যানবাহন। পাশাপাশি সড়কে বাস, মাইক্রো, মোটরসাইকেল ও রিকশার জন্য লেন ভাগ করে দিয়ে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে কাজ চলে। ফলে যেখানে-সেখানে থামতে পারেনি গাড়ি। উল্টো পথে চলার কোনো সুযোগ ছিল না। হেলমেট ছাড়া মোটরসাইকেল চলাচলও বন্ধ ছিল। লাইন ভেঙে তাড়াহুড়ো করে সামনে যাওয়ার তাড়া ছিল না চালকদের। পথচারীরা রাস্তা পার হন শৃঙ্খলা মেনে। এমন চিত্র দেখা গেছে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে।
শহরের কোথাও অকারণে দাঁড়াতে পারেনি কোনো গণপরিবহন। গাড়িগুলোকে চলতে হয়েছে লেন মেনে। যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে যাত্রীও তুলতে পারেননি চালকরা। বাসচালকদের আজীবনের অভ্যাস এক দিনে বদলে যেতে দেখেছেন নগরবাসী।
শিক্ষার্থীদের এমন কাজে উচ্ছ্বসিত সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে চালকরা বেশি খুশি। অন্যান্য সময় রাস্তায় বের হলেই ট্রাফিক পুলিশ বিভিন্ন ঝামেলা করত। গত দু’দিন ধরে সেই ধরনের জটিলতায় পড়তে হয়নি।
শিক্ষার্থীরা বলেন, একজন ট্রাফিক যেভাবে সড়কে দায়িত্ব পালন করতেন, তারাও চেষ্টা করেছেন। তবে সড়কের নীতিগুলো অনুসরণের বিষয়গুলো দেখছেন তারা। মোটরসাইকেলে দু’জনের বেশি বসতে দেখলে জীবনের ঝুঁকির বিষয়ে সচেতন হওয়ার বিষয়টি স্মরণ করিয়ে অন্তত একজনকে নেমে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।
ছাত্র-জনতা সামাল দেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রবেশ মুখও। মোটরসাইকেল, অটোরিকশা, হেঁটে যাওয়া উৎসুক সাধারণ মানুষ যে যেভাবে পেরেছেন অচলাবস্থার প্রথম দিকে উঠেছেন ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে। কিন্তু ধীরে ধীরে সেই পরিস্থিতিও পাল্টে গেছে। ছাত্র-জনতার পক্ষ থেকেই ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে নিষিদ্ধ সব যানবাহন। মোটরসাইকেল ও অটোরিকশা উঠতে দেওয়া হয়নি।
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরে রাজারবাগ কেন্দ্রীয় পুলিশ হাসপাতালে পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মো. ময়নুল ইসলাম বলেন, আমাদের ট্রাফিকে জনবলের সমস্যা নেই। এরইমধ্যে ইন্টারকন্টিনেন্টাল সিগন্যাল থেকে জাহাঙ্গীর গেট পর্যন্ত ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কাজ শুরু করেছেন। এসব জায়গায় অনেক বেশি ট্রাফিক পুলিশ সদস্য কাজ করছে। ধীরে ধীরে সব সড়কে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা কাজ শুরু করবে।
আইজিপি আরও বলেন, এসব সড়কে শিক্ষার্থী, বিএনসিসি ও স্কাউটের সদস্যরাও রয়েছেন। ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের সঙ্গে যেন শিক্ষার্থীদের কোনো ভুলভ্রান্তি না হয় সেজন্য ছাত্র সমন্বয়কদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে।
এর আগে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, যেসব শিক্ষার্থী রাস্তায় ট্রাফিকের কাজ করছে তাদের তালিকা করে সবাইকে পুলিশের পক্ষ থেকে সার্টিফিকেট দেওয়া হবে। এই সার্টিফিকেট চাকররি ক্ষেত্রে যেন মূল্যায়ন হয়।