Wednesday, December 25, 2024
spot_img

‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টে জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান

রাজধানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টে মঞ্চ মাতালেন পাকিস্তানের জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আহত ও নিহতদের সাহায্যার্থে আয়োজিত এ কনসার্টে শনিবার (২১ ডিসেম্বর) রাত ১০টার দিকে মঞ্চে ওঠেন তিনি।

শনিবার বিকেল চারটার দিকে ব্যান্ড সিলসিলার কাওয়ালি গানের মাধ্যমে কনসার্টটি শুরু হয়।

ব্যান্ড সিলসিলার কাওয়ালি গান

এরপর ম‌ঞ্চে আসেন ‘আওয়াজ উডা’ গা‌নের জন্য প‌রি‌চিত র‍্যাপার হান্নান। শুরু‌তে র‍্যাপ গান‌টি প‌রি‌বেশন ক‌রেন তি‌নি, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থা‌নে গান‌টি গাওয়ার জন্য জেল খে‌টে‌ছেন হান্নান। হান্না‌নের প‌রি‌বেশনার পর ম‌ঞ্চে আসেন আরেক আলো‌চিত র‍্যাপার সেজান। ‘কথা ক’ গান দি‌য়ে সাধারণ শ্রোতা‌দের মা‌ঝে প‌রি‌চিতি পে‌য়ে‌ছেন সেজান। ম‌ঞ্চে গানটি ধর‌লে শ্রোতা‌দের ম‌ধ্যে সাড়া ফে‌লে।

বির‌তির পর সা‌ড়ে পাঁচটার দি‌কে ম‌ঞ্চে আসে রক ব্যান্ড ‘আফটারম্যাথ’।

রক ব্যান্ড ‘আফটারম্যাথ’

মাইক্রোফোন হা‌তে ব্যা‌ন্ডের ভোকা‌লিস্ট না‌ভিদ ইফ‌তেখার চৌধুরী শ্রোতা‌দের বল‌লেন, ‘এর আগে কখ‌নোই আর্মি স্টেডিয়া‌মে আফটারম্যাথ কনসার্ট ক‌রে‌নি। প্রথমবা‌রের ম‌তো আর্মি স্টে‌ডিয়া‌মে গাইছি। এবার স্বপ্ন পূরণ হ‌লো।’

কনসার্টে শুরু‌তেই ব্যান্ড‌টি গে‌য়ে‌ছে তরুণ‌দের মধ্যে আলোচিত গান ‘অধিকার’। এরপর ‘উৎসর্গ’, ‘মা‌টির রোদ’সহ আরও ক‌য়েক‌টি গান প‌রি‌বেশন ক‌রে‌ছে আফটারম্যাথ।

সন্ধ্যায় মঞ্চে আসে ব্যান্ডদল চিরকুট।

ব্যান্ডদল চিরকুট

শুরুতে বাদ্যযন্ত্রীরা জাতীয় সংগীতের সুর তোলেন। স্টেডিয়ামে দর্শকের আসনে বসে থাকা শ্রোতারা জাতীয় সংগীতের প্রতি সম্মান জানিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েন। এরপর দেশাত্মবোধক গান ‘ধনধান্য পুষ্পভরা’ দিয়ে পরিবেশনা শুরু করে ব্যান্ডের ভোকা‌লিস্ট সু‌মি।

এরপর ‘ম‌রে যাব’, ‘জাদুর শহর’, ‘আহা‌রে জীবন’-এর ম‌তো গান দিয়ে ঘোরলাগা ছড়িয়ে দেয় ব্যান্ড‌টি। মোলায়েম সু‌রের এসব গানে যাতনা খুঁজে খুঁজে ফিরেছেন শ্রোতারা।

আর্মি স্টেডিয়ামে তখন হাজারো দর্শক অপেক্ষায়। পাকিস্তানের সুফি সংগীতের জনপ্রিয় শিল্পী রাহাত ফতেহ আলী খান মঞ্চে এলেন ছেলে শাজমান ফতেহ আলী খানকে সঙ্গে নিয়ে; ঢাকার দর্শকদের ভাসালেন সুরের মূর্চ্ছনায়।

হাজার হাজার দর্শক

‘ইকোস অব রেভল্যুশন’ কনসার্টে গাইতে রাত ৯টা ৫০ মিনিটে মঞ্চে ওঠে রাহাত ফতেহ আলী খান ও তার দল। ‘তেরি মেরি’ গানের সুরে সেতার ও সানাই পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শুরু হয় পরিবেশনা৷

সেই পরিবেশনা শেষে রাহাত ফতেহ আলী বলেন, “বাংলাদেশ আমি তোমায় ভালোবাসি। পাকিস্তান থেকে তোমাদের ভালোবাসায় চলে এলাম। প্রথমবার আমার ছেলে বাংলাদেশে এসেছে। তাকে নিয়েই শুরু করলাম ‘আশ পাশ খুদা’।

এরপর ‘সাজনা তেরি বিনা’, ‘নিত কেহার মাঙ্গা’, ‘ওরে প্রিয়া’, তেরি আঁখো কী দড়িয়া কা’, ‘তেরে রাশকে কামার’ গানে মাতিয়ে তোলেন দর্শকদের। উপমহাদেশের সংগীত কিংবদন্তি নুসরাত ফতেহ আলী খানের ভাতিজা রাহাত তার জনপ্রিয় বিভিন্ন গজলও পরিবেশনা করেন।

শনিবার বিকাল ৪টা থেকে আর্মি স্টেডিয়ামে শুরু হয় কনসার্ট। জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম শুরুতে ঘোষণা দেন, কনসার্টের সামনের সারিতে ভিআইপি আসনে থাকবেন অভ্যুত্থানে আহত ১০০ জন দর্শক। কনসার্টের ভিআইপি অতিথি হিসেবে আসন গ্রহণ করবেন তারা৷

এ কনসার্ট থেকে পাওয়া অর্থ যাবে শহীদ জুলাই স্মৃতি ফাউন্ডেশনে। বিনা পারিশ্রমিকে গান গাওয়ায় কনসার্টে আসা শিল্পীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সারজিস।

বিকেল পর্যন্ত বনানীর আর্মি স্টেডিয়ামে ততটা দর্শক দেখা যায়নি। যদিও স্টেডিয়ামের বাইরে লক্ষ্য করা গেছে অস্বাভাবিক যানজট। সন্ধ্যা নামতেই অবশ্য বদলে যায় দৃশ্য। আসতে শুরু করেন দর্শনার্থীরা। যেন তরুণদের দখলে চলে যায় বনানীর আর্মি স্টেডিয়াম।

ছেলে শাজমান ফতেহ আলী খান

শনিবার বেলা দুইটা থেকে দর্শকদের জন্য খুলে দেওয়া হয় আর্মি স্টেডিয়ামের গেট। তার আগে থে‌কেই আর্মি স্টে‌ডিয়া‌মের বাইরে দর্শনার্থীদের দীর্ঘ সা‌রি দেখা গে‌ছে। সময় বাড়ার স‌ঙ্গে স‌ঙ্গে শ্রোতা‌দের উপ‌স্থি‌তি বাড়‌ছে। তবে স্টেডিয়ামের বাইরে রাস্তায় ভীষণ যানজটে নাকাল অবস্থায় দেখা গেছে মানুষকে। কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশ ও স্কাউটরা জানান, বনানীগামী রাস্তা সাময়িকভাবে বন্ধ, এই তথ্য অনেকে জানতেন না। এ কারণে তাদের যানজটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। ওই রাস্তায় চলাচলরত গাড়িগুলো এক্সপ্রেসওয়ে ব্যবহারের পরামর্শ দিয়ে তারা জানিয়েছেন, এক্সপ্রেসওয়েতে আজ টোল নেওয়া হচ্ছে না।

দর্শকদের উদ্দেশ করে এই ‘চ্যারিটি কনসার্ট’ এর আয়োজক সাদেকুর রহমান সানি বলেন, ” আমাদের দুই মাসের পরিশ্রমের ফসল এই কনসার্ট। আপনাদের নিয়ে জুলাই আন্দোলনে আহতদের জন্য কিছু করতে পারার এই ভালো লাগা সকলের।”

কনসার্টে আরও উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের হাই কমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার, যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূইয়া, বাণিজ্য উপদেষ্টা বশির উদ্দিন

- Advertisment -spot_img

সবচেয়ে জনপ্রিয়